বিজ্ঞান ভাবনা সবুজ ঢেঁকি
Adhunik Sabuj Dhenki
ফন্ট ডাউনলোড লিংক:
সঙ্গে
দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে
অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14
Default text font setting)
Default
text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
এবং
অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14
Default Internet font setting)
Default
Internet font setting ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং
আধুনিক সবুজ ঢেঁকি
আধুনিক সবুজ ঢেঁকি
Adhunik Sabuj Dhenki
মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা
আগে
ধান ভানার জন্য ঢেঁকি ব্যবহার করা হত এখনও এক-আধটু হয় কোথাও কোথাও ধান থেকে খোসা
ছাড়িয়ে চাল তৈরি করার জন্য ঢেঁকি ব্যবহার করা হয় পরে সেই চাল আবার আরও সুন্দর বা
মসৃণ করার জন্য কখন কখন আবারও ঢেঁকিতে ভানা হয় এযুগে ধান ভানার ইলেকট্রিক মেশিন
আসায় ঢেঁকি আর দেখা যায় না প্রতিযোগিতায় ঢেঁকি টিঁকতে পারেনি কিন্তু ঢেঁকি ছাঁটা
চালে যত খাদ্যগুণ থাকে কলে ছাঁটা চালে তা থাকে না
ঢেঁকির
একটা অসুবিধা আছে, তা হল, ঢেঁকিতে ধান ভানতে মানুষকে কায়িক পরিশ্রমে কাজ সারতে হয় বেশ
পরিশ্রমের কাজ আর সাধারণভাবে দুজনের কমে ঢেঁকিতে কাজ করা কঠিন তিনজন হলেই ভালো
হয় দুজন ঢেঁকির পিছনের দিকে, যাঁরা ঢেঁকিতে পায়ের চাপ দিয়ে ঢেঁকি চালনা করেন(এটাকে পাড় দেওয়া বলে ), আর একজন থাকেন ঢেঁকির সামনের দিকে পুরো কাজটি সাধারণভাবে
মহিলারাই করে থাকেন ধান ভানার জন্য যে কায়াল/লোড/গড় বা গর্ত থাকে, যেখানে ধান
রেখে ধান ভানা হয়, সেখানে ধান নাড়িয়ে দেবার জন্যও একজন লোকের দরকার হয় সেই কাজটিই তৃতীয়জন
করেন তার আবার কিন্তু বেশ বিপদও আছে ধান নাড়াতে গিয়ে যদি সময়ের হিসেবে হেরফের
হয়, তবে ঢেঁকির মুশল তার হাতে পড়ে হাতখানা খুবই জখম হবে আর অসাবধান হলে ভারী ঢেঁকি
মাথাতেও আঘাত করতে পারে এই দুটি বিপদকে সামনে রেখে ঢেঁকিতে ধান ভানতে হয় দেখা
গেছে ঢেঁকির মুশলে আঙুল বা পুরো হাত চাপা পড়ে বহু মহিলাই আহত হয়েছেন এ জন্য অত্যন্ত
সতর্কভাবে কাজ করতে হয় আর ধান ভানতে দীর্ঘ সময়ও লাগে শুরু করলাম আর শেষ করলাম,
এমন হয় না আবার অনেক সময়ে এক বারেও হয় না, ধান থেকে চাল, এবং সেই চালকে আরও ভালোভাবে
মসৃণ করতে আবারও তা ভানতে হয় তাই ধান ভানার সময়ে মহিলারা নানা গল্পগুজব করেন, কখনও
কখনও গানও করেন দিশি ঘরোয়া গান
আমড়া
গাছ দি ঢেকি বানাই ...
গুঁয়া গাছ দি সিয়া...
আমার
কথা হুইন্না তুমি ত্যাজ হইয়া উইঠ্ঠো না ...
-- গানটি বাংলাদেশের কবি আব্দুল রচিত?
তবে
অতি সতর্ক হয়েই ঢেঁকিতে কাজ করতে হয় তাই মহিলারা যে অসতর্ক একথা বলা যাবে না, যদিও
সাধারণ ধারণা যে মহিলারা অসতর্ক হন নানা সময়ে নানা কাজে তাঁদের পুরুষের চেয়ে বেশি
ধৈর্য ধরে শ্রম করতে হয়, যে-শ্রম সচরাচর গ্রাহ্য হয় না বলে চোখে পড়ে না, তাই বোঝা
যায় না জানালার পাশে টিকটিকির বিষ্ঠা মুছে ফেলার ব্যাপারটি কোনও ‘কাজের’ মধ্যেই
পড়ে না, কিন্তু কাজটি যে খুব দরকারি তা বোঝা যাবে, কাজটি করা না হলে এধরনের কাজ
সাধারণভাবে মহিলারাই করেন
যদি
নতুন একটি সহজ পদ্ধতিতে ঢেঁকি চালনার ব্যবস্থা করা যায়, যাতে কায়িক শ্রম অনেকটা কমে
সিকি ভাগ হয়ে যাবে, এবং ঢেঁকির মুশলে হাত দুরমুশ হওয়া, বা ঢেঁকির কাঠে মাথায় আঘাত পাবার
কোনও ব্যাপার থাকবে না, তবে খুব ভালো হয় মাত্র একজন লোকেই ঢেঁকি চালনা করতে পারবেন, এবং একটু কৌশল
করে কায়াল/লোড/গড় বা গর্তের ধান নিজেই নাড়াতে পারবেন দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যক্তির দরকার হবে
না
নতুন
ব্যবস্থার ঢেঁকি কেমন হবে তার ছবিটি দেখা যাক --
ঢেঁকি-১
ঢেঁকি-২
নতুন যান্ত্রিক ঢেঁকি সবুজ ঢেঁকি সহজ শ্রম ও
অর্থ সাশ্রয়ী
ঢেঁকিতে
পিছনের দিকে একটি নাভিকেন্দ্র বা ফালক্রাম(fulcrum) থাকে
মুশল সহ ঢেঁকির এক দিকটা নাভিকেন্দ্রের সামনের দিকে থাকে, বাকি অংশ পিছনে থাকে
সামনের দিকটা বেশি ভারী ফলে পা দিয়ে চাপ/ধাক্কা দিয়ে ঢেঁকির মাথার/সামনের দিকটা
তুলে দিয়ে ছেড়ে দিলে, তথা পিছনের চাপ মুক্ত করলে তা ধপ্ করে নিচে নামে এতে মুশলের
আঘাতে সামনের দিকে কায়াল/লোড/গড়/গর্তে থাকা ধানের খোসা সরে গিয়ে ভিতরের চাল বরিয়ে
পড়ে পদ্ধতিটি অতি প্রাচীন, আর এ ভাবেই চলে আসছিল তার পরে যখন ইলেকট্রিক ঢেঁকি বা
(ধান থেকে)চাল ছাঁটা মেশিন এলো তখন ক্রমে মানুষের শ্রমে চালানো ঢেঁকি কমতে কমতে
এখন আর ঢেঁকি কোথাও নেই বললেই হয় অথচ থাকলে ভালো হত, তাতে চালের গুণমান বাড়ত
কিন্তু মানুষে চালানো ঢেঁকিতে পরিশ্রম অনেক তাই তা আর দেখা যায় না যদি কম
পরিশ্রমে সহজে এই কাঠের যন্ত্রটি চালিয়ে চাল/তণ্ডুল তৈরি করা যেত তবে চালের গুণমান
অনেক বাড়ত বিজ্ঞানীরা, চিকিৎসকেরা এমনি চালই খাবার সুপারিশ করেন
ঢেঁকি-৩
ঢেঁকির
উঁচুর দিকের পুলি বা কপিকল
ঢেঁকি-৪
ঢেঁকির নিচের দিকের পুলি বা কপিকল
যদি কম পরিশ্রমের সহজ-ঢেঁকি তৈরি করা যায় তবে
লাভ একাধিক, এক-- উন্নত স্বাস্থ্যকর চাল পাওয়া যাবে, দুই-- পরিশ্রম অনেক কম করতে
হবে, তিন-- একজনেই ধান ভানার কাজটি করা সম্ভব হবে, তিনজন লাগবে না চার-- এতে
উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে যাবে পাঁচ-- সব কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে পরিবেশের দূষণ
বেড়ে যায়, যেটা মোটেই কাম্য নয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতাসে সবচেয়ে
বেশি দূষণ ছড়ায় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি তথা কয়লা ব্যবহার করে, বা ডিজেল ব্যবহার
করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয় সেটাও কাম্য নয় এখন তো সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে জোর
দেওয়া হচ্ছে সেদিক দিয়ে দেখলে এটি সম্পূর্ণ সবুজ ঢেঁকি ধানকলের মতো বিদ্যুৎ
ব্যবহার করতে হয় না পরিবেশ দূষণের কোন ব্যাপারই নেই নতুন সহজ সবুজ ঢেঁকিতে
খাদ্যগুণ যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি আগেকার ঢেঁকির চেয়ে পরিশ্রম অনেক কম হবে, পরিবেশ
দূষণ তথা বায়ুদূষণ হবে না, চালের উৎপাদন ব্যয় কমবে তাই এটি হল সম্পূর্ণ সবুজ
ঢেঁকি, অর্থাৎ দূষণহীন ঢেঁকি
আজকাল
মানুষ স্বাস্থ্য-সচেতন হয়ে উঠেছেন, তাই তাঁরা দরকারে বেশি দাম দিয়েও ঢেঁকি-ছাঁটা
চাল কিনতে আগ্রহী কিন্তু বাজারে তা পাওয়া কঠিন এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন সহজ সবুজ ঢেঁকি
কাজে লাগিয়ে চাল উৎপাদন করা যেতে পারে
ঢেঁকি
চালানো হয় পিছনের পাদানে পা দিয়ে চাপ দিয়ে বা ধাক্কা দিয়ে নতুন এই ঢেঁকি কিন্তু চালানো
হবে বিপরীত দিক থেকে, অর্থাৎ সামনের দিক থেকে পিছনে পায়ের চাপ দিয়ে আগে যেভাবে ঢেঁকিতে
‘পাড়’ দেওয়া হত, বা ঢেঁকি চালানো হত, এখানে তা করা হবে না সামনের দিকে ঢেঁকির মুখে
একটা আংটা বা রিং থাকবে, সেই আংটায় দড়ি বেঁধে দড়িটি উপরের দিকের একটা পুলি/কপিকলের
উপর দিয়ে নিচে নামবে
এবার
সেই দড়ি নিচের দিকে মাটির কাছে থাকা অন্য একটা পুলি/কপিকলের নিচ দিয়ে ঘুরে গিয়ে একটা
কাঠের ছোটো পাটাতনের সঙ্গে বাঁধা থাকবে, আর এই পাটাতনে পা দিয়ে চাপ দিলে আগের মতোই
ঢেঁকির মুখ সহজে উপরে উঠে আসবে পাটাতনের উপরের চাপ মুক্ত করলে/চাপ সরিয়ে দিলে বা চাপ
ছেড়ে দিলে ঢেঁকির মুখটা ধপ্ করে নিচে ধানের মধ্যে পড়বে, যে ধান কায়াল/লোড/গড়ের
মধ্যে বা গর্তে রাখা আছে এভাবে ঢেঁকির কাজ চলতে থাকবে স্বাভাবিক ঢেঁকির মতোই, ঢেঁকির
ভারী মুশলের আঘাতে গর্তে রাখা ধানের খোসা সরে গিয়ে চাল তৈরি হবে যিনি পাটাতনে
পায়ের চাপ দিয়ে ঢেঁকি চালাবেন তাঁর এতে পরিশ্রম খুবই কম লাগবে, কারণ ঢেঁকির মুখ
উপরে উঠছে পুলির/কপিকলের সাহায্যে যিনি এভাবে ধান ভানবেন, তিনি নিজেই তার অবস্থানে
থেকেই একটি দণ্ড বা লাঠি ব্যবহার করে ধান নাড়িয়ে দিতে পারবেন, কারণ কায়াল/লোড/গড়
বা ধান ভানার গর্ত তো তাঁর হাতের খুব কাছেই হবে
আরও
অনেক জটিল হুইল, স্প্রিং, বলবিয়ারিং ব্যবহার করে এসব বানানো যায় তাতে সাধারণ
মানুষের কাছ থেকে ঢেঁকি দূরেই থেকে যাবে ইলেকট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে যন্ত্র বা ধান ছাঁটা মেশিন তো আছেই, তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না, তা ব্যবসায়ীর
ব্যবসা বৃদ্ধি করে মাত্র তাই যতটা সহজে সবুজ ঢেঁকি চালানো যায় সে দিকটা দেখা হয়েছে
বিভিন্ন
দিক থেকে সবুজ ঢেঁকি বা আধুনিক ঢেঁকির আরও কিছু ছবি দেখা যাক, যা ব্যাপারটিকে
বুঝতে সাহায্য করবে--
ঢেঁকি-৫
ঢেঁকি-৬
ঢেঁকি-৭
ঢেঁকি-৮
ঢেঁকি-৯
ঢেঁকি-১০
ঢেঁকি-১৪
সামনের কাঠের কুঁদো → সামা /মুশল
শস্য ভাঙ্গার সামনের গর্ত → গড় / কায়াল
সামার(কাঠের কুঁদোর) নিচের লোহার বেল্ট → যাতে
কাঠটা সহজে নষ্ট না হয়
ঢেঁকির পিছনের নাভিকেন্দ্র/ফালক্রাম(Fulcrum), যার
উপরে ভর করে ঢেঁকি ওঠা-নামা করে
ঢেঁকির পিছনের দিকে থাকা ধরবার আড়া → এবার সেই
আড়াটা সামনের দিকে হবে, যেখানে লোক দাঁড়িয়ে ঢেঁকি চালাবেন
ঢেঁকি বা কাঠের বিশাল বডি দেখতে অনেকটা আধুনিক
রকেটের মতো গঠন এর
পিছনের দিকটা ক্রমে খানিকটা সরু হয়ে এসেছে
কৃতজ্ঞতা:
১আমার করা হাতের ড্রইং থেকে থ্রি-ডি(3-D) ছবি এঁকে, এবং ভিডিয়ো(video) ছবি করে দিয়েছে
বর্ণনা মিত্র(ব্যাঙ্গালুরু)
বর্ণনা মিত্র(ব্যাঙ্গালুরু)
সবুজ ঢেঁকির ভিডিয়ো ছবি
ছবির উপরে ক্লিক করুন
ঢেঁকির পিছনটা সরু হবে, সামনের দিকটা হবে ভারী
যাতে ঢেঁকির পিছনে দেওয়া পায়ের চাপ ছেড়ে দিলে
ঢেঁকির মাথাটা ধপ্ করে পড়ে
পুরনো রীতির ঢেঁকির ছবি নিচে দেখানো হল
ছবিটি স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে পাঠিয়েছেন -- তুষার আহসান
তাঁকে ধনাবাদ
-- ০০ --
নতুনভাবে চালানো এই সবুজ ঢেঁকি নিয়ে
পাঠকদের মন্তব্য সাদরে আহ্বান করি